সংবাদপত্র বার্তাডেস্ক ৫ মে ২০২৪ , ৩:০২:৫৭ প্রিন্ট সংস্করণ
ফ্ল্যাট কেনার আগে কোন কোন বিষয় দেখতে হবে, সেগুলো দিয়ে শুরু যাক। ভবনের নকশা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) অনুমোদিত কি না, দেখতে হবে। অনুমোদন নেওয়া থাকলে নকশা অনুযায়ী ভবন তৈরি হয়েছে কি না, খোঁজ নিন। কারণ, নকশা অনুযায়ী ভবন তৈরি না হলে যেকোনো সময় ভবনের সেই অবৈধ অংশ ভেঙে দিতে পারে রাজউক। কোনো প্রকল্প রাজউকের অনুমোদিত কি না, সংস্থাটির ওয়েবসাইটে গিয়েও তা দেখা যায়। রাজধানীর ক্ষেত্রে যেমন রাজউক নকশা অনুমোদন করে, তেমনি চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ তাদের নিজ নিজ এলাকার প্রকল্পের অনুমোদন দিয়ে থাকে।
আরেকটি বিষয়, যে আবাসন প্রতিষ্ঠান থেকে ফ্ল্যাট কিনবেন, সেটি রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) সদস্য কি না, নিশ্চিত হয়ে নেবেন। রিহ্যাবের সদস্য নয়, এমন প্রতিষ্ঠান থেকে ফ্ল্যাট না কেনাই ভালো। কারণ, পরে কোনো সমস্যা হলে রিহ্যাবের কাছে অভিযোগ করা যাবে না। দেশের প্রচলিত আইনের পাশাপাশি সংগঠনের নিয়মকানুন মেনে চলার কারণে সদস্যপ্রতিষ্ঠানগুলো জবাবদিহির মধ্যে থাকে।
যে প্রতিষ্ঠানের বা ব্যক্তির ফ্ল্যাটটি কিনতে যাচ্ছেন, তার মালিকানা আছে কি না, নিশ্চিত হতে হবে। এ জন্য প্রস্তাবিত ফ্ল্যাটটি যে জমিতে অবস্থিত, তার সর্বশেষ রেকর্ডে বিক্রয়কারীর নাম উল্লেখ আছে কি না এবং সিএস, এসএ, আরএসসহ অন্যান্য খতিয়ানের ক্রম মিলিয়ে দেখতে হবে। জমিটি যদি ডেভেলপার কোম্পানি কোনো মালিকের কাছ থেকে নিয়ে থাকে, তাহলে এ সম্পর্কে চুক্তিপত্র আছে কি না, তা–ও যাচাই করা প্রয়োজন। প্রতিষ্ঠানটি নতুন না পুরোনো, তাদের আগের কোনো অভিজ্ঞতা আছে কি না, অতীতে ওই প্রতিষ্ঠানের দ্বারা কেউ প্রতারিত হয়েছেন কি না, রিহ্যাব থেকে তা জেনে নিতে হবে।
যিনি বিক্রি করছেন, তাঁর নামে খতিয়ান রয়েছে কি না, সেটি নিশ্চিত হওয়া দরকার
যিনি বিক্রি করছেন, তাঁর নামে খতিয়ান রয়েছে কি না, সেটি নিশ্চিত হওয়া দরকারছবি: পেক্সেলস
আবাসন প্রতিষ্ঠান ক্রিডেন্স হাউজিংয়ের লিগ্যাল ডিপার্টমেন্টের ব্যবস্থাপক মাঈনুল ইসলাম বলেন, আবাসন প্রকল্পের জমির মালিকানার ধারাবাহিকতা সঠিক আছে কি না, যাচাই করতে হবে। যিনি বিক্রি করছেন, তাঁর নামে খতিয়ান রয়েছে কি না, সেটি নিশ্চিত হওয়া দরকার। সিএস, এসএ, আরএস এবং ঢাকা সিটি জরিপ ঠিক আছে কি না, তা–ও দেখতে হবে। সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসে গিয়ে জমিটি নিষ্কণ্টক নাকি কোনো সমস্যা আছে, যাচাই করা যেতে পারে। আবার জমিটি কোথাও বন্ধক আছে কি না, সেটিও যাচাই করা জরুরি। আইনজীবী নিয়োগ করেও কাজগুলো করা যায়।
ফ্ল্যাট কেনার পর
রিয়েল এস্টেট আইন অনুযায়ী, একজন ক্রেতা তাঁর সমুদয় মূল্য পরিশোধের তিন মাসের মধ্যে আবাসন নির্মাতা দখল হস্তান্তর, দলিল সম্পাদন এবং নিবন্ধনের যাবতীয় কাজ সম্পাদন করে দেবেন।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ফ্ল্যাট বুঝে নিন
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ফ্ল্যাট বুঝে নিনছবি: পেক্সেলস
মাঈনুল ইসলাম বলেন, ফ্ল্যাট নিবন্ধনের জন্য প্রথমে সনদপ্রাপ্ত একজন দলিল লেখকের কাছে যেতে হবে। একজন আইনজীবীর মাধ্যমেও কাজটি করা যায়। দলিল লেখা হয়ে গেলে সব ধরনের ফি সোনালী ব্যাংকে পরিশোধ করতে হবে। তারপর সাবরেজিস্ট্রার অফিসে রেজিস্ট্রারের সামনে দলিলসহ অন্য কাগজপত্রসহ ফ্ল্যাটের ক্রেতা–বিক্রেতাকে হাজির হয়ে নিবন্ধনপ্রক্রিয়া শেষ করতে হবে।
ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এলাকার ক থেকে ঘ শ্রেণির মৌজায় ফ্ল্যাট বা অ্যাপার্টমেন্ট বা বাণিজ্যিক জায়গা নিবন্ধনে প্রতি বর্গফুটে ৮০০ টাকা অথবা দলিলে উল্লেখিত মূল্যের ৮ শতাংশের মধ্যে যেটি বেশি হয়, সেটি অতিরিক্ত কর হিসেবে দিতে হবে। আর ঙ শ্রেণির মৌজার ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুটে ৫০০ টাকা বা দলিলে উল্লেখিত মূল্যের ৬ শতাংশের মধ্যে যেটি বেশি হয়, সেটি হবে অতিরিক্ত কর। আর অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রতি বর্গমিটারে অতিরিক্ত কর ৩০০ টাকা অথবা দলিলে উল্লেখিত মূল্যের ৬ শতাংশের মধ্যে যেটি বেশি হয়।
এই অতিরিক্ত করের সঙ্গে ফ্ল্যাট নিবন্ধনে দলিলে উল্লেখিত মূল্যের ওপর স্ট্যাম্প ফির দেড় শতাংশ, নিবন্ধন ফি ১ শতাংশ, স্থানীয় সরকার কর ২ শতাংশ, মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট ২ থেকে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ (১৬০০ বর্গফুটের নিচে ২ শতাংশ ভ্যাট ও তার চেয়ে বেশি হলে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ) দিতে হয়। তাতে ১৬০০ বর্গফুটের কম আয়তনের একটি ফ্ল্যাট বা অ্যাপার্টমেন্টের নিবন্ধন ব্যয় বর্তমানে কমপক্ষে ১৪ দশমিক ৫০ শতাংশে দাঁড়াবে।
লেখাটি প্রথম আলোর বিশেষ ম্যাগাজিন ‘বর্ণিল বসত’ জানুয়ারি ২০২৪ সংখ্যায় প্রকাশিত