স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর :: ৪ অক্টোবর ২০২৪ , ১২:০১:৩৯ প্রিন্ট সংস্করণ
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়েছে। অন্তর্বতী সরকার গঠনের পর দেশের সবকটি সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলরদের অপসারণ করা হয়। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসকের দায়িত্ব পেয়েছেন বিভাগীয় কমিশনার। কিন্তু তাকেও বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে। এরপর থেকে অভিভাবক ছাড়া রয়েছে রাজধানীর সন্নিকটে দেশের সর্ববৃহত গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন। এই বৃহত সিটির বাসিন্দারা নাগরিক সেবা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে মেয়র জায়েদা খাতুনের পাশাপাশি অপসারণ করা হয় গাজীপুর সিটির ৫৭ টি ওয়ার্ডের সাধারণ ও সংরক্ষিত নারী মিলিয়ে ৭৬ কাউন্সিলরকে। মেয়র ও কাউন্সিলর পদে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সরকারি কর্মকর্তাদের। তবে সিটির প্রশাসক হিসেবে বিভাগীয় কমিশনারকে দায়িত্ব দেওয়া হলেও তাকে পরবর্তীতে ওএসডি করা হয়। এতে স্থবির হয়ে পড়েছে নাগরিক সেবা।
এই সিটি কর্পোরেশনে ২৬লক্ষাধিক জনগোষ্ঠী ও প্রায় ১১লাখ ভোটার রয়েছে। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৯২ বর্গ কিলোমিটার। এখানে রয়েছে দুটি সরকারি হাসপাতাল, একাধিক বেসরকারি মেডিকেল কলেজ, ১০-১২টি বাসস্টেশন, বিভিন্ন ব্যাংকসহ নানা সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া রয়েছে জাতীয় ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, মাদ্রাসাশিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটসহ অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। একটি সমরাস্ত্র কারখানা, একটি সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেস (টাকশাল), বাংলাদেশ কৃষি ও ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, টেলিযোগাযোগ স্টাফ কলেজ, কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্র, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার, টেলিফোন শিল্প সংস্থা, দুটি রেলওয়ে জংশন, একটি রেলওয়ে স্টেশন, ২ হাজারের বেশি পোশাক কারখানা, কাজ করেন ২২ লক্ষাধিক শ্রমিক। তাছাড়াও বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জমায়েত বিশ্ব ইজতেমা গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকার টঙ্গীতে অনুষ্ঠিত হয়।
গত ১৯ আগষ্ট ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার সাবিরুল ইসলামকে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়। সরকার সংস্কারের অংশ হিসাবে অন্তবতীকালীন সরকার পরবর্তীতে নির্বাচিত ৫৭টি ওয়ার্ডের ৭৬ জন কাউন্সিলরকে অব্যাহতি দেন। সিটির কার্যক্রম শুরুর আগেই নতুন প্রশাসক সাবিরুলকে করা হয় ওএসডি। এখন প্রশাসকের পদশূন্য। অন্যদিকে ৭৬ জন নির্বাচিত কাউন্সিলরের বিপরীতে ১৭জন বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাকে স্থলাভিষিক্ত করে সিটি সচল রাখার চেষ্টা চালাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।
অপসারণ, অব্যাহতি আর ভারপ্রাপ্তের ভারে গাজীপুর সিটির ৫৭ ওয়ার্ডের ৮টি মেট্রোপলিটন থানার ২৬ লাখ মানুষ সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন। উন্নয়ন প্রকল্পসহ সব ধরনের কার্যক্রমে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। নাগরিক সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন মানুষ। এই সিটির বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের সিটি করপোরেশন শুধু নামেই কামে কিছুই না।
এ বিষয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা লুৎফর রহমান বলেন, নাগরিক সেবা ব্যাহত হচ্ছে। ওএসডি করায় সিটির প্রশাসক পদটিও শূন্য রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২০১৩ সালে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর কোনো নির্বাচিত প্রতিনিধি (মেয়র) তার পূর্ণ মেয়াদ পার করতে পারেনি। এর ফলে কাঙিক্ষত উন্নয়ন হয়নি গাজীপুর সিটির। প্রথম মেয়র বিএনপির প্রয়াত ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম এ মান্নানকে বিভিন্ন রাজনৈতিক মামলায় গ্রেফতার করে নগরবাসীকে নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত করা হয়। এরপর আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র নির্বাচিত হন এড. মো: জাহাঙ্গীর আলম। তাকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি অংশ কোনঠাসা করে রাখে মেয়াদের অর্ধেক সময়। প্রায় দুই বছর বরখাস্ত ছিলেন জাহাঙ্গীর। সর্বশেষ সিটি নির্বাচনে (স্বতন্ত্র) মেয়র জায়েদা খাতুনও মেয়াদ পূর্ণ করতে পারলেন না। দেশের ১১ সিটির মেয়রের সঙ্গে তাকেও অপসারণ করেছে সরকার।