সংবাদপত্র বার্তাডেস্ক ৫ মে ২০২৪ , ৩:১৩:১১ প্রিন্ট সংস্করণ
বর্তমানে চাকরির বাজারে শিক্ষার্থীদের অসম্ভব প্রতিযোগিতা। এ প্রতিযোগিতা শুরু হয় অনার্সে ভর্তির পরই। কিন্তু গতানুগতিক এই প্রতিযোগিতা ছেড়েও অনেকেই চেষ্টা করছেন নিজে কিছু করে স্বাবলম্বী হওয়ার। তাদের মতোই একজন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ সিয়াম।
তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। রাজশাহী মহানগরীর মো. নজরুল ইসলামের একমাত্র ছেলে। বর্তমানে তার মাসিক আয় লক্ষাধিক টাকা।
তার অধীনে প্রায় অর্ধশত মানুষ কর্মরত আছেন। এতে করে জাতীয় আয়ে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি প্রায় অর্ধশত যুবকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। সহকর্মী হিসেবে আছেন তার আরেক বন্ধু আজমাইন মাহতাব মারুফ। তিনি রাজশাহী কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী। দুই বন্ধুর এ উদ্ভাবনী শক্তি আলো দেখাচ্ছে দেশের হতাশাগ্রস্ত, বেকার তরুণদের।
বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থীসহ ইনহাইউস ও রিমোট ওয়ার্কার মিলে মোট ২৭ জন দক্ষ লোকবল কাজ করছে তাদের তার অধীনে। প্রতি মাসে যাদের সামষ্টিক আয় লক্ষাধিক টাকা। রাজশাহী মহানগরীতে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক ও নগরীর ছোটবনগ্রাম এলাকায় তাদের লাইসেন্সভুক্ত অফিস রয়েছে।
তবে তার সফলতার গল্প শুনে বোঝা যায় এই পথটাও খুব সহজ ছিল না। আব্দুল্লাহ জানান, যাত্রাটা শুরু মূলত ২০২০ সালে। করোনার প্রকোপে দেশের মানুষের অনলাইন ভিত্তিক কেনাকাটার প্রবণতা বেড়ে যায়। তখনই ই-কমার্স ভিত্তিক ব্যবসার চিন্তা প্রথম মাথায় আসে। এ সেক্টরে যাত্রা শুরু করলেও মূলধনের স্বল্পতায় বেশি দূর এগোনো সম্ভব হয়নি। এর পাশাপাশি তারা দুই বন্ধু বিসিএফ নামক একটি সাইবার সিকিউরিটি সস্থায় সিনিয়র ক্রু মেম্বার হিসবে যুক্ত থাকায় কোডিং এর দিকেও আমাদের খানিকটা ঝোঁক ছিল ছোট থেকেই।
তিনি একটা সময় অনুধাবন করতে পারেন ব্যবসার মূল খুঁটি- পুঁজি ও যোগ্যতা। অল্প বয়সে এ সেক্টরে এগোনোর ব্যপারে পরিবারের সহায়তা তেমন পাননি। তবে যথেষ্ট সচ্ছল পরিবারেই বেড়ে উঠা তার। অভাবের তাড়না না থাকলেও নিজে কিছু করার প্রবল ইচ্ছাশক্তি ছিল। পরবর্তীতে কোডিং এর যোগ্যতাকে পুঁজি করে ক্যারিয়ার গড়ার পরিকল্পনা করেন। এ চিন্তা থেকেই ২০২০ এর শেষের দিকে একটি টেক ফার্মে প্রথম কাজ শুরু করেন। সেখানে পরিকল্পনা অনুযায়ী নিজের প্রোগ্রেস না হওয়ায় কয়েক মাস পরে আরেকটি স্টার্টআপ টেক কোম্পানিতে শেয়ার পার্টনার হিসেবে যুক্ত হন।
তিনি বলেন, স্টার্টআপ টেক কোম্পানিতে শেয়ার পার্টনারদের মাঝে যৌথ পরিকল্পনায় বিভিন্ন ঘাঠতি থাকায় বছর না ঘুরতেই সরে আসি। পরে ২০২২ সালের মাঝামাঝি আমাদের ডিএক্স টেকনোলজির যাত্রা শুরু হয়। এর সঙ্গে ডিএক্স লার্নিং, ডিএক্স আলটিমাসহ বেশ কয়েকটি সেক্টরে ফিনটেক ও অ্যাডটেক ব্যবসাকে বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এরই মধ্যে আমাদের সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট প্রতিষ্ঠান ডিএক্স টেকনোলজি টিম তাদের আসন্ন ডোরস্টেপস প্রজেক্ট উপস্থাপন করে গত বছর নর্থ বেঙ্গল স্টার্টআপ সামিট-২০২৩ এ সারাদেশ থেকে আগত ২৫টি স্টার্টআপ টেক কোম্পানির মধ্যে চতুর্থ স্থান অর্জন করে।
এ কাজের শুরুতে বেশকিছু সীমাবদ্ধতা সামনে আসে জানিয়ে আবদুল্লাহ বলেন, পরিবার কিংবা রোডম্যাপে চলার ক্ষেত্রে কিছুটা বাধা এসেছে শুরুতে। পরিচিতজনদের অসহযোগিতামূলক পরামর্শ বারবার মনোবল ভেঙে দিত। তবে পরবর্তীতে সম্ভাবনা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পরিবারের উৎসাহ ও পুঁজি ভিত্তিক সহায়তাও বৃদ্ধি পেতে থাকে। আমি বিশ্বাস করি, চেষ্টা ও সঠিক কর্মপরিকল্পনা থাকলে যেকোনো বিষয়েই সফলতা অর্জন করা সম্ভব।
আব্দুল্লাহর সহকর্মী ও বন্ধু মারুফের ভাই-বোনদের সবাই শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত। সে কারণে বাবা-মায়ের ইচ্ছা ছিল মারুফ যেন পেশা হিসেবে শিক্ষকতাকে বেছে নেয়। কিন্তু পরবর্তীতে এই পেশায় তার অগ্রগতি ও সম্ভাবনা দেখে পরিবার তাকে পূর্ণ সহযোগিতা করে।
ঝুঁকির বিষয়ে তারা জানান, চাকরিজীবী পরিবারে জন্ম হওয়া সত্ত্বেও অনুভব করেন প্রতিটি চাকরির কেন্দ্রে রয়েছে পুঁজিভিত্তিক ব্যবসা। আর সে ব্যবসাকে ক্যারিয়ার হিসেবে নেওয়ার প্রতি পরিবার থেকেও উৎসাহ ছিল। তাছাড়া চাকরির ক্ষেত্রে আয়ের পরিমাণ নির্দিষ্ট একটা সংখ্যায় সীমাবদ্ধ হলেও ব্যবসার ক্ষেত্রে প্রচেষ্টার ওপর আয়ের পরিমাণ নির্ভর করে। চাকরি হোক কিংবা ব্যবসা, প্রেক্ষাপট আলাদা হলেও চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করতে হয় সব অবস্থাতেই।
শিক্ষার্থী অবস্থায় এই সফলতার অনুভূতি জানিয়ে আব্দুল্লাহ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস আর বন্ধুদের সময় দেওয়ার পাশাপাশি সময়মত অফিসে বসা অবশ্যই অনেক চ্যালেঞ্জিং। একদিকে যেমন পরীক্ষার চিন্তা, আরেকদিকে লাভ-লসের হিসাব। তবে লেখাপড়ার পাশাপাশি ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্টের চেষ্টা করছি এটাও একরকম মানসিক প্রশান্তি দেয়। যে অলস সময়টা আমরা উদ্দেশ্যহীনভাবে অপচয় করতে পারতাম, সে সময়ে হয়তো প্রায় দ্বিগুণ বয়সী কোনো ক্লায়েন্টের সঙ্গে তার বিজনেস মডিউল সাজানোর ক্ষেত্রে আমি ও আমার টিম কিভাবে ভূমিকা রাখতে পারি, তা নিয়ে আলোচনা করছি।
তিনি আরও বলেন, যে সময়টা ফেসবুক, ইন্সটাগ্রামে অপ্রয়োজনীয় স্ক্রলে নষ্ট করতাম, সে সময়টা হয়তো মার্কেট রিসার্চে কিংবা উপযোগী কোনো আর্টিকেলে চলে যাচ্ছে। যুগান্তকারী পরিবর্তন এখনো আনতে না পারলেও এটা ভেবেই ভালো লাগে যে, আমি আমার সময়কে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছি।’