বিনোদন ডেস্ক :: ১৭ অক্টোবর ২০২৪ , ১১:১৭:১৯ প্রিন্ট সংস্করণ
মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি বলে বাংলাদেশে আপাতত আর কিছু অবশিষ্ট নেই। শুধু গান প্রকাশ করছে নিয়মিত, এমন প্রতিষ্ঠানও এখন খুঁজে পাওয়া যায় না। বরং গান তার স্বতন্ত্রতা হারিয়েছে নাটকের অনুষঙ্গ হিসেবে। বিপরীতে রয়্যালটি আর কপিরাইট রিয়েলিটি নিয়েও জটিলতা কাটেনি আজও।
তবু আশার আলো জ্বালিয়ে রেখেছিলেন দেশের স্বাধীন মিউজিশিয়ানরা। বেশিরভাগ সংগীতশিল্পীই নিজ উদ্যোগে গান সৃষ্টি ও প্রকাশের দরজা খুলেছেন সীমিত পরিসরে, ইউটিউব চ্যানেলের হাত ধরে। সঙ্গে এটাও তারা অনুভব করছিলেন, বিচ্ছিন্ন থেকে একক উদ্যোগে আসলে ইন্ডাস্ট্রি হওয়া যায় না। এর জন্য লাগে সম্মিলিত প্রয়াস এবং প্রফেশনাল প্ল্যাটফর্ম।
অনেকটা এই অভিজ্ঞতা কিংবা অভাববোধ থেকেই দেশীয় সংগীতে নতুন সুর যোগ করলো ‘মিউজিক আলফা’ নামের একটি সদ্য প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান। যেটিকে সংশ্লিষ্টরা ঠিক প্রতিষ্ঠান বলতেও নারাজ। তাদের ভাষায়, এটা হলো সংগীতের একটি কো-অপারেটিভ সোসাইটি। যেটার একক কোনও মালিকানা নেই। যার মালিক আসলে যুক্ত হওয়া প্রতিজন শিল্পী। যেখানে সবার সমান অধিকার সুরক্ষিত থাকছে।
১৫ অক্টোবর সন্ধ্যায় নগরীর বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে ‘মিউজিক আলফা’র আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হলো। সঙ্গে প্রকাশ হলো প্রতিষ্ঠানটির প্রথম গান ‘আমি আকাশ হয়ে আছি’। জোবায়ের শাওনের কথায় শান সায়েকের সুরে গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন সাব্বির জামান। ভিডিও নির্মাণ করেছেন কাজল আরফিন অনিক। গানটি শুনলে যে কেউ মিষ্টি কিছু বাতাসে ভেসে যেতে পারেন মন ভালো করার দেশে।
তবে তারচেয়েও দরকারি তথ্য এই, মিউজিক আলফা’র সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন শান সায়েক, সাব্বির জামানসহ মোট ২৫ জন শিল্পী-মিউজিশিয়ান-গীতিকবি-সুরকার-সংগীতায়োজক-ভিডিও নির্মাতা। এখানেই আটকে থাকছেন না তারা। ক্রমশ যুক্ত হবেন আরও অনেকেই। আলফা’র প্রধান সমন্বয়ক শান সায়েকের স্বপ্ন, গোটা মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির প্রতিজন সদস্যকেই তিনি দেখতে চান এই সোসাইটির সদস্য হিসেবে। এবং সদস্যরাই এই প্রতিষ্ঠানের মালিক। যেখানে একক কোনও মালিক কিংবা আলাদা কোনও কমিটি নেই।
তাহলে প্রকাশিত গানের আয় বণ্টন হবে কেমন করে? জবাবে শান সায়েক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি প্রথম দিন থেকে যা করছি তার সবটুকুই সব সদস্যদের সম্মতিতে করতে। যেমন আমাদের প্রকাশিত প্রথম যে গান, সেটি কিন্তু নির্ধারিত হয়েছে অনেকগুলো গান থেকে লটারির মাধ্যমে। আবার এই গানটি থেকে যদি ১০ টাকা আয় হয়, তবে সেটার মালিক কিন্তু ২৫ জনই। এই সংখ্যা আরও বাড়বে। যতই হোক, সব আয় সব সদস্য সমানভাবে ভাগ করে নেবো। আমরা চাই, প্রতিটি গানের মালিকানা হোক সব সদস্যের। এতে আমাদের মধ্যে বিভেদ কমবে, সখ্য বাড়বে। তবেই ইন্ডাস্ট্রি হয়ে উঠতে পারবো আমরা। এর কোনও বিকল্প আর নেই। কারণ আমাদের সবার পিঠ দেয়ালে ঠেকে আছে।’
বলা ভালো, ১৫ অক্টোবর উদ্বোধনী আয়োজনে ‘মিউজিক আলফা’কে স্বাগত জানিয়ে হাজির ছিলেন নাফ্রিজা শ্যামা (অতিরিক্ত সচিব, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়), আবদুল মুক্তাদির (যুগ্ম সচিব, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়), মেহজাবীন রহমান (পরিচালক, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি-সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তি) এবং সংগীতশিল্পী সুজিত মুস্তফাসহ অনেকে। আগত প্রত্যেকেই এই উদ্যোগের সাধুবাদ জানিয়েছেন।
‘মিউজিক আলফা’র আরেক সমন্বয়ক সাব্বির জামান জানান, প্রতি সপ্তাহে একটি করে নতুন গানচিত্র আসবে এই ব্যানার থেকে। যে তালিকায় নতুন থেকে পুরনো; সব মুখই থাকবে। তা-ই নয়, এর মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির কোষাগারে জমা রয়েছে শতাধিক গান। শান সায়েক জানান, আরও কয়েকজন সদস্য চূড়ান্ত করে দ্রুতই ‘মিউজিক আলফা’র রেজিস্ট্রেশন করবেন সমবায় সমিতি হিসেবে। এরপর সব সদস্য মিলে গঠন করবেন একটি পরিচালনা কমিটি। এরপর এটি সমবায় নীতিমালা ধরেই চলতে থাকবে।