নিজস্ব প্রতিবেদক :: ৯ অক্টোবর ২০২৪ , ৫:২৭:৩৯ প্রিন্ট সংস্করণ
‘বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত’ বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘পরিবর্তনের সুযোগ আমাদের সবাইকে নিতে হবে। এই দেশটা কারও একার নয়। ১৯৭১ সালে আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছিলাম… সেই স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছিলাম তার যে মূল চেতনা ছিল, বাংলাদেশে সত্যিকার অর্থেই একটা অসাম্প্রদায়িক, সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক একটা রাষ্ট্র, একটা সমাজ নির্মাণ করবো। সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।’ আজ বুধবার (৯ অক্টোবর) দুর্গা পূজার ষষ্ঠীতে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী কেন্দ্রীয় পূজা মণ্ডপে গিয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদেরকে শুভেচ্ছা জানিয়ে এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন বিএনপির মহাসচিব।
তিনি বলেন, ‘আমি আজকে এখানে এসেছি… আমি আমার দলের পক্ষ থেকে, দলের চেয়ারপারসন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি…. এই শারদীয় দুর্গা পূজা আপনাদের জীবনে অনাবিল আনন্দ নিয়ে আসুক, একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ নির্মাণ করুক, বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থেই একটা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত হয়ে থাকুক… এই কামনা করছি, এই প্রত্যাশা করছি।’
তিনি বলেন, ‘যে দেবীর আপনারা আরাধনা করছেন, যাকে আপনারা মা দুর্গা বলেন এবং এই দেবীর আর্বিভাব হয়েছিল অসুরকে বদ করার জন্যে, অন্যায়কে দূর করার জন্যে এবং মানুষে মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব বন্ধুত্ব সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠার জন্যে। হিংসা-প্রতিশোধ-প্রতিহিংসা দূর করে ভালোবাসা প্রেমের সমাজ নির্মাণ করার জন্যে।’‘আজকে সেই সুযোগ আমাদের সামনে উপস্থিত হয়েছে। আমরা ভয়াবহ দানবীয় শক্তিকে পরাজিত করে সম্ভাবনা সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছি, যেখানে আমাদের একটা নতুন বাংলাদেশ নির্মাণ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে আমাদের মধ্যে কোনও ভেদ থাকবে না, ভেদাভেদ থাকবে না, ধর্মান্ধতা থাকবে না, সাম্প্রদায়িকতা থাকবে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনারা যে ৮ দফার কথা বলেছেন, সেই ৮ দফা আমরা বিবেচনা করছি। এর যে মূল বিষয়টি সেটার প্রতি আমাদের সর্বাত্মক যে সহানুভূতি সেটা আমাদের রয়েছে। আমরা আপনাদের এটুকু বলতে পারি, অতীতে যেমন আমরা আপনাদের প্রতিটি সমস্যায় পাশে এসে দাঁড়িয়েছি, ঠিক একইভাবে আগামীতেও আপনাদের সঙ্গে থাকবো।’
তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য একটি রাজনৈতিক দল আমি নাম বলতে চাই না, তারা বরাবরই বলে থাকে— তারাই নাকি এখানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ত্রাণকর্তা। কিন্তু আপনারা যদি দেখেন, অতীতে যতগুলো ঘটনা ঘটেছে তার নেতৃত্বে কিন্তু তাদের লোকেরাই সেখানে ছিল এবং বাংলাদেশে আপনাদের সম্প্রদায়ের মানুষের যত জমি-জমা, সম্পত্তি দখল করে নেওয়া হয়েছে তার মূলেও তারা ছিল।’
‘আমরা এই কথাটা বলতে পারি আগামীতে আমাদের যখন… প্রতিষ্ঠিত হবে… আপনারা জানেন, এটা আমাদের সরকার নয়, এটা একটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আমাদের সরকার আসলে প্রতিটি ঘটনার আমরা নিরপেক্ষ তদন্ত করে বিচারের ব্যবস্থা করবোই।’
‘আপনার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং আপনার নির্দেশে সারা দেশে পূজা কমিটির টিমের সঙ্গে আপনাদের নেতারা সাংগঠনিকভাবে আলাপ-আলোচনা করেছেন। পূজায় আমাদের নিরাপত্তার কাজে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। সেজন্য আপনাদের ধন্যবাদ জানাই।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে এই বিশাল পরিবর্তনের ফলে সারা দেশের মানুষ যখন আনন্দিত হয়েছে… যখন পরিবর্তনের একটা আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি হয়েছে, আশা তৈরি হয়েছে, সেই সময়ে দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিদেশি কিছু মিডিয়া, কিছু প্রচার মাধ্যম তারা বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিরুদ্ধে কথা বলেছে, যা একেবারেই সত্য নয়।’ ‘ঘটনা ঘটেনি সেকথা আমি বলবো না। কিছু ঘটনা ঘটেছে তা কোনও সাম্প্রদায়িক ঘটনা ছিল না, তা ছিল রাজনৈতিক ঘটনা।’
আওয়ামী লীগ সরকারের নির্যাতনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন যে, ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে আমরা দীর্ঘ ১৫ বছর সংগ্রাম-লড়াই করেছি এবং এতে আমাদের অনেক নেতাকর্মী প্রাণ দিয়েছেন, আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে, মিথ্যা মামলার বেড়াজালে আমরা অনেকেই এখন পর্যন্ত আটক আছি।’
‘আপনারা জানেন যে, কিছুদিন আগে যে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান হলো, সেখানে প্রায় ১৫০০ ছাত্র-জনতা শহীদ হয়েছেন । তাদের প্রতি আমরা শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। আমরা সরকারের কাছে আবেদন জানাবো শহীদদের পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্ষতিপূরণ এবং তাদের পরিবারের ভরণ পোষণের ব্যবস্থা করা হয়। এবং আপনাদেরও যদি কোনও ব্যক্তি বা পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে, তাদেরও আমি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’ অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।