খেলা ডেস্ক :: ৪ অক্টোবর ২০২৪ , ৫:২৩:৫৭ প্রিন্ট সংস্করণ
খেলাটা ফুটবলের মতোই। খেলোয়াড়দের পায়ে ফুটবলের চেয়ে অপেক্ষাকৃত ছোট বল থাকে। ফুটবলের তুলনায় এই বল কম লাফায়। আবার ফুটবল মাঠের তুলনায় এই খেলার মাঠও বেশ ছোট। ঘাসের বদলে মাঠ হয় হার্ডকোর্টের। প্রতি দলে ৫ জন করে খেলোয়াড়। বদলি করা যায় যত খুশি তত। বলের ওপর নিয়ন্ত্রণ ও সৃজনশীলতার জন্য এই খেলার বিশ্বব্যাপী আলাদা কদর আছে।
কোন খেলার কথা বলা হচ্ছে, তা এতক্ষণে অবশ্য বুঝে ফেলার কথা। ঠিকই ধরেছেন, ফুটসাল। কারও কারও চোখে এটি ফুটবলের ঘরোয়া সংস্করণ কিংবা অভ্যন্তরীণ ফুটবল। আর এই ফুটসালেরই বিশ্বকাপ ফাইনালে হবে ‘স্বপ্নের ম্যাচ’—ব্রাজিলের মুখোমুখি আর্জেন্টিনা!
উজবেকিস্তানে গত ১৪ সেপ্টেম্বর শুরু হয়েছে ফিফা ফুটসাল বিশ্বকাপ। তাসখন্দে গতকাল হুমো অ্যারেনায় অনুষ্ঠিত সেমিফাইনালটি ছিল গত বিশ্বকাপ ফুটবল ফাইনালের ‘রি–ম্যাচ’। ফ্রান্সের মুখোমুখি হয়েছিল আর্জেন্টিনা এবং এই ম্যাচেও জয়ী লাতিন আমেরিকার দেশটি। তবে বিশ্বকাপ ফুটবল ফাইনালের মতো টাইব্রেকারে নয়, ফ্রান্সকে সরাসরি ৩–২ গোলে হারিয়ে ব্রাজিলের বিপক্ষে ফাইনাল নিশ্চিত করেছে ফুটসালে একবারের চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। ফুটবলের মতো ফুটসালেও ব্রাজিল পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। গত পরশু ইউক্রেনকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে ব্রাজিল। জয়ের ব্যবধান? ওই তো, আর্জেন্টিনার মতোই ৩–২।
এমন ম্যাচ, যেখানে আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপের ফাইনালে, এর চেয়ে বড় ম্যাচ আর হয় না। আমার মতে ফুটসাল–ঈশ্বর নিজে এই ম্যাচ ঠিক করেছেন, আর সেটা তো ফাইনালই হবে।
আর্জেন্টিনা ২০১৬ সালে প্রথমবারের মতো ফুটসালে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়। ২০২১ সালের ফুটসাল বিশ্বকাপের ফাইনালে তাঁরা হেরেছে পর্তুগালের কাছে। ব্রাজিল সর্বশেষ ২০১২ সালে থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ফুটসাল বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলেছে। সেবার স্পেনকে ৩–২ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় ব্রাজিল। অর্থাৎ ১২ বছর পর আবারও ফুটসাল বিশ্বকাপের শিরোপা জয়ের সুযোগ ব্রাজিলের সামনে। কিন্তু কাজটি কি সহজ হবে? মোটেও না। টানা তৃতীয়বারের মতো ফাইনালে উঠে দ্বিতীয় শিরোপা জয়ের লক্ষ্যে মরিয়াই থাকবে আর্জেন্টিনা।
ফুটবল হোক বা ফুটসাল—ব্রাজিল–আর্জেন্টিনা ম্যাচের আবেদন এমনিতেই অন্য রকম। ২০১৪ সালে যেমন ব্রাজিলের মানে গারিঞ্চা স্টেডিয়ামে ব্রাজিল–আর্জেন্টিনা প্রীতি ফুটসাল ম্যাচে দর্শক হয়েছিল ৫৬ হাজার ৪৮৩ জন। ফুটসালের ইতিহাসে এটাই সর্বোচ্চ দর্শকসংখ্যার ম্যাচ। আগামী রোববার বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টায় তাসখন্দের হুমো অ্যারেনায় অনুষ্ঠেয় ফাইনালেও টইটম্বুর দর্শক আশা করা হচ্ছে। যদিও এই ইনডোর অ্যারেনার দর্শক ধারণক্ষমতা মাত্র ১২ হাজার ৫০০। তাতে অবশ্য ব্রাজিল–আর্জেন্টিনা ফাইনালের আবেদন কমছে না।
ব্রাজিলের উইঙ্গার পিতো যেমন ফাইনাল নিয়ে বলেছেন, ‘এমন ম্যাচ, যেখানে আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপের ফাইনালে, এর চেয়ে বড় ম্যাচ আর হয় না। আমার মতে ফুটসাল–ঈশ্বর নিজে এই ম্যাচ ঠিক করেছেন, আর সেটা তো ফাইনালই হবে।’ আর্জেন্টিনার গোলকিপার নিকো সারমিয়েন্তোর চোখে, ‘কোনো সন্দেহ নেই, ফুটসালের ইতিহাসে এটাই সবচেয়ে বড় ম্যাচ। আমার মনে হয়, ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনায় জন্ম নেওয়া সবাই এমন ম্যাচের স্বপ্ন দেখেন। বিশ্বের বাকিদের কাছেও এটা স্বপ্নের ম্যাচ। আর্জেন্টিনা–ব্রাজিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় ডার্বিও, সবাই এই ম্যাচ দেখতে চায়।’
১৯৩০ সালে প্রথম বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজনের বছর এই খেলা আবিষ্কার করেছিলেন উরুগুয়ের শিক্ষক হুয়ান কার্লোস চেরিয়ানি। স্থানীয় ওয়াইএমসিএ–এর যুব চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য এই খেলা আবিষ্কার করেছিলেন তিনি।
বিশ্বকাপ ফুটবলের মতো ফুটসাল বিশ্বকাপের ফাইনালেও এর আগে ব্রাজিল–আর্জেন্টিনা মুখোমুখি হয়নি। সিনিয়র পর্যায়ের ফুটবল ও ফুটসাল বিশ্বকাপ মিলিয়ে এটাই প্রথম ব্রাজিল–আর্জেন্টিনা ফাইনাল। ফুটসালে এ পর্যন্ত ৮৩ ম্যাচে আর্জেন্টিনার মুখোমুখি হয়ে ৬৬ বার জিতেছে ব্রাজিল। আর্জেন্টিনা জিতেছে ৮ ম্যাচ, ড্র হয়েছে বাকি ৯ ম্যাচ। দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বির এই মুখোমুখিতে প্রথম ২৮ ম্যাচ জিতে একচেটিয়া আধিপত্য ছিল ব্রাজিলের। তবে সর্বশেষ ১০ বারের মুখোমুখিতে দুই দলই জিতেছে ৩টি করে ম্যাচ, ড্র বাকি ৪টি। সর্বশেষ ২০২১ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ব্রাজিলকে ২–১ গোলে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছিল আর্জেন্টিনা।
লাতিন আমেরিকার অনেক কিংবদন্তি ফুটবলার শৈশবে ফুটসাল খেলে বড় হয়েছেন। ব্রাজিলের যেমন রোনালদো, দেনিলসন কিংবা রবার্তো কার্লোস, আর্জেন্টিনায় তেমনি লিওনেল মেসি শৈশবে ফুটসাল খেলেছেন। তাঁদের বাইরে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, জাভি, লুইস ফিগো, আন্দ্রেস ইনিয়েস্তাদের মতো কিংবদন্তিরাও ছোটবেলায় ফুটসাল খেলেছেন। ফিফা ও বিশ্ব ফুটসাল অ্যাসোসিয়েশন (এএমএফ) এই খেলার নিয়ন্ত্রক সংস্থা। পর্তুগিজ ভাষায় ‘রুম ফুটবল’ নামে পরিচিত এই খেলা ইউরোপ ও দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের দেশগুলোয় বেশি জনপ্রিয়।
ফুটসাল মাঠের দৈর্ঘ্য ৩৮ থেকে ৪২ মিটার, প্রস্থ ২০ থেকে ২৫ মিটার হয়ে থাকে। দুই অর্ধের এই খেলায় প্রতি অর্ধে ২০ মিনিট করে খেলা হয়। অফসাইড নেই, তবে ফুটবলের মতো লাল কার্ড ও হলুদ কার্ডের নিয়ম আছে। ১৯৩০ সালে প্রথম বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজনের বছর এই খেলা আবিষ্কার করেছিলেন উরুগুয়ের শিক্ষক হুয়ান কার্লোস চেরিয়ানি। স্থানীয় ওয়াইএমসিএ–এর যুব চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য এই খেলা আবিষ্কার করেছিলেন তিনি। তখন প্রতি দলে ১১ জন করে খেলতে পারতেন। তবে তিরিশের দশকেই ফুটসালের আরেকটি সংস্করণ ব্রাজিলের সাও পাওলোর রাস্তায় দেখা গেছে বলে দাবি করা হয়। ১৯৩৬ সালে ব্রাজিল থেকেই প্রথম এই খেলার নিয়মকানুন প্রকাশ করা হয়। ১৯৬৫ সালে এই খেলার প্রথম আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়। ফুটসালের প্রথম বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮৯ সালে। এ পর্যন্ত আয়োজিত ৯টি ফুটসাল বিশ্বকাপের মধ্যে সর্বোচ্চবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ব্রাজিল। স্পেন চ্যাম্পিয়ন হয়েছে দুবার। আর্জেন্টিনা ও পর্তুগাল একবার করে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।