স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর :: ১০ নভেম্বর ২০২৪ , ১:৪৯:৩২ প্রিন্ট সংস্করণ
একটি প্রতিষ্ঠানের ৫টি ইউনিটের শ্রমিকেরা বকেয়া বেতনের দাবিতে ২৬ ঘণ্টা ধরে মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছেন। রাজধানীর সঙ্গে উত্তর ও পশ্চিমবঙ্গের যোগাযোগর গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়ক কখন থেকে চালু হবে তা অজানা। কখন এই মহাসড়ক চালু হবে তা বলতে পারছে না পুলিশও। এতে টঙ্গী থেকে রাজেন্দ্রপুর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার যানজট লেগে গেছে।
আজ রবিবার (১০ নভেম্বর) সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে মহাসড়কে দায়িত্বরত গাজীপুর শিল্প পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মোশাররফ হোসেন বলেন, মহাসড়ক বন্ধ আছে। কখন চালু হবে জানি না। বেতন ছাড়া শ্রমিকেরা সড়ক ছাড়ছেন না।
শিল্প পুলিশ জানায়, গত শনিবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে গাজীপুরে বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে মহানগরীর বাসন এলাকায় এলাকায় টি অ্যান্ড জেড গ্রুপের পাঁচ কারখানা শ্রমিকেরা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন।
আজ রবিবার টিএনজেড অ্যাপারেলস লিমিটেড, বেসিক ক্লোথিং লিমিটেড, অ্যাপারেলস প্লাস, বেসিক নিটওয়্যার লিমিটেড ও আপারেল আর্ট লিমিটেডের প্রায় দুই হাজার শ্রমিক সড়কে বিক্ষোভ করছেন। এতে ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-কিশোরগঞ্জ, ঢাকা টাঙ্গাইলে, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কসহ আশপাশের আঞ্চলিক সড়কগুলোতে তীব্র যানজট দেখা গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গাজীপুর মহানগরের টঙ্গী স্টেশন রোড, বোর্ড বাজার থেকে চান্দনা চৌরাস্তাসহ রাজেন্দ্রপুর পর্যন্ত অন্তত ২০ কিলোমিটার সড়কে থেমে থেমে চলছে যানবাহন। ঢাকামুখী ঢাকা-কিশোরগঞ্জ রুটের অনন্য পরিবহন, জলসিড়ি পরিবহন যাত্রী নিয়ে দীর্ঘ লাইনে রাজেন্দ্রপুর এলাকায় সড়কের পাশে দাঁড় করানো হয়েছে। এতে গাজীপুর নগরের সালনা থেকে চান্দনা চৌরাস্তা ও ভোগরা বাইপাস হয়ে টঙ্গী পর্যন্ত দীর্ঘ যানজট।
দেখা যায়, বিভিন্ন যানবাহনের যাত্রীরা হেঁটে হেঁটে তাদের গন্তব্যে যাচ্ছেন। বয়স্ক, শিশু এবং নারীরা পড়েছেন সবচেয়ে বেশি বিপাকে। যাদের সঙ্গে রয়েছে বড় ব্যাগ-পোটলা-বস্তা তাদেরকেও বেশ কষ্ট পোহাতে হচ্ছে। ছোট ছোট যানবাহন বিশেষ করে মোটরসাইকেল, রিকশা, ইজিবাইক যাওয়ার চেষ্টা করলে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা লাঠিসোটা নিয়ে তেড়ে আসছেন। আন্দোলরত শ্রমিকেরা জানান, গত তিন মাস ধরে একটা টাকাও বেতন পাইনি। মালিকের আশ্বাসে এতদিন অপেক্ষা করেছি। আর পারছি না। আমাদের হয় মৃত্যু, নাহয় বকেয়া বেতন।
শ্রমিকদের অভিযোগ, গত এপ্রিল মাস থেকে কারখানা বন্ধ ছিল। সেপ্টেম্বরে কারখানা খুললেও দুই মাসের বেতন না দিয়ে কর্তৃপক্ষ টালবাহানা করছে। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর মাধ্যমে বারবার বেতন পরিশোধের তারিখ দেওয়া হলেও কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের বেতন দিচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে সড়ক অবরোধ করতে হয়েছে।
ঢাকা কিশোরগঞ্জ রুটে চলাচলকারী অনন্যা পরিবহনের বাস চালক সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘চার ঘণ্টা ধরে যানজটে বসে আছি। কি কারণে কিছুই বুঝতে পারছি না। শুনলাম সামনে আন্দোলন চলছে শ্রমিকদের। বাসের যাত্রী সব নেমে গেছে। গাড়ি কখন ছাড়বে জানি না।’
ইউনাইটেড বাসের ষাটোর্ধ বৃদ্ধ মোহাম্মদ কামাল বলেন, ‘আমি ময়মনসিংহ থেকে ছেলের বাসা যাত্রাবাড়ীতে যাব। তবে চার ঘণ্টা ধরে জ্যামে বসে আছি। আমার শরীর অনেক খারাপ। আমি কিডনি ও হার্টের রোগী। যেকোনো সময় অজ্ঞান হয়ে পড়ে যেতে পারি। তারা আন্দোলন করছে আমাদের ভোগান্তি দিয়ে। মানুষের কষ্ট যদি না বুঝে তাহলে তারা কিসের শ্রমিক।’
গাজীপুরের ট্রাফিক পুলিশের এস আই মনির হোসেন জানান, শনিবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিক্ষোভ শুরু করেন শ্রমিকেরা। আজো বিক্ষোভ চলমান রয়েছে।