নিজস্ব প্রতিবেদক :: ২১ অক্টোবর ২০২৪ , ১:০০:৪৩ প্রিন্ট সংস্করণ
গণমাধ্যম থেকে ফ্যাসিবাদের দোসরদের বিতাড়িত করার আহবান জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেছেন, ‘স্বৈরাচারের দোসররা এখনো দেশে-বিদেশে নানা ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত চালাচ্ছে। তারা নানাভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছে। গণমাধ্যমেও ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচারের দোসররা রয়েছে। তাদের বিতাড়িত করতে না পারলে জুলাই অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে না।’
গত রবিবার রাতে জাতীয় প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন উপদেষ্টা। বর্ণাঢ্য কর্মসূচির মধ্য দিয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত হয়। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ভিডিও প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে এই অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠানমালায় ছিল কেক কাটা, আলোকচিত্র প্রদর্শনী, নৈশ ভোজ, আকর্ষণীয় র্যাফল ড্র এবং মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও কালের কণ্ঠ’র সম্পাদক কবি হাসান হাফিজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে জাতীয় প্রেস ক্লাবের প্রয়াত সদস্য ও জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পাঁচজন সাংবাদিকসহ অন্যদের ওপর শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভূঁইয়া। পরে তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এর আগে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়।
অনুষ্ঠানে তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম স্বৈরাচারের দোসরদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আপনারা আত্মসমর্পণ করুন। জুলাই অভ্যুত্থানকে স্বীকার করুন। আমাদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেছে। আমরা চেয়েছিলাম নিয়মতান্ত্রিকভাবে সব সমস্যার সমাধান করতে; কিন্তু তা হচ্ছে না। তাই আর কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। গণমাধ্যম, পুলিশ, প্রশাসনসহ সব জায়গা থেকে স্বৈরাচারের দোসরদের বিতাড়িত করা হবে। তবে আত্মসমর্পণ করে রাজসাক্ষী হলে তাদের বিষয়গুলো বিবেচনা করা যেতে পারে।’
শেখ হাসিনাকে সাইকো আখ্যা দিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘হাসিনাকে বাংলাদেশে ফিরতে হবে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝোলার জন্য। কিছু গণমাধ্যম জুলাই আন্দোলনের স্পিরিট ধারণ থেকে সরে এসেছে। আন্দোলনে যাঁরা শহীদ হয়েছেন, কিছু গণমাধ্যম তাঁদের নিহত ও মৃত বলে লিখছে। অথচ রাষ্ট্রীয়ভাবে বীরশ্রেষ্ঠ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, তাঁরা শহীদ। বর্তমানে গণমাধ্যম যে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে, তা অতীতে বা কত দিন আগে সম্ভব ছিল, আমার জানা নেই। গণমাধ্যম কমিশন গঠন করা হয়েছে।’ এ সময় গণমাধ্যমকর্মীদের জনগণের বিরুদ্ধে না দাঁড়ানোর আহবান জানান তিনি।
সমাপনী বক্তব্যে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। স্বৈরাচারের দোসররা এখনো বহু জায়গায় আছে। গণমাধ্যমেও ষড়যন্ত্রকারীরা রয়েছে। ভারতীয় মিডিয়ায়ও আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চলছে। ভারতের সঙ্গে আমরা বন্ধুত্ব চাই, কিন্তু সেটা হতে হবে সমতার ভিত্তিতে। যেকোনো ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য সাংবাদিকরা প্রস্তুত আছেন।’
এ সময় উপস্থিত প্রেস ক্লাবের কর্মকর্তাদের মধ্যে ছিলেন কাদের গনি চৌধুরী, কবি আবদুল হাই শিকদার, কাজী রওনাক হোসেন, বখতিয়ার রানা, একেএম মহসিন, মাসুমুর রহমান খলিলী, শাহনাজ পলি ও মোমিন হোসেন প্রমুখ।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রেস ক্লাব ভবনসহ পুরো প্রেস ক্লাব এলাকায় নান্দনিক আলোকসজ্জা করা হয়। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য বিকেল থেকে ক্লাবের সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট সবাই ক্লাবে আসতে থাকেন। বিকেল থেকে সদস্য দম্পতিদের পদচারণে মুখরিত হয়ে ওঠে ক্লাব আঙিনা। তারা সেলফি তোলার পাশাপাশি আড্ডায় মেতে ওঠেন। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান আকর্ষণ ছিলেন বরেণ্য সংগীতশিল্পী ফেরদৌস আরা, কনকচাঁপা, উল্কা হোসেন, আলম আরা মিনু, শাহরিয়ার রাফাত, ইবনে রাজন প্রমুখ। ১৯৫৪ সালে রাজধানীর তোপখানা রোডে জাতীয় প্রেস ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন এর নাম ছিল পূর্ব পাকিস্তান প্রেস ক্লাব।