প্রতিনিধি ১২ ডিসেম্বর ২০২৪ , ২:১৬:০৮ প্রিন্ট সংস্করণ
স্টাফ রিপোর্টার :: ১৯৭১ সালের ১২ ডিসেম্বর আজকের এই দিনে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ যুদ্ধের মধ্য দিয়ে গাজীপুরের শ্রীপুর পাক হানাদারমুক্ত হয়। এদিন সকালেই শ্রীপুরের মাটিতে ওড়ে প্রথম লাল সবুজের স্বাধীন পতাকা। ১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর ভোরে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে শ্রীপুরের ইজ্জতপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখযুদ্ধ হয়। গোসিঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র কিশোর সাহাব উদ্দিন ওই যুদ্ধে শহীদ হন। মুক্তিযোদ্ধাদের হামলায় সেখানে চারজন রাজাকার ও একজন পাকসেনাও নিহত হয়।
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কেওয়া আকন্দবাড়ী গ্রামের শহীদ সাদির আকন্দের ছেলে নুরুজ্জামান আকন্দ জানান, ১৯৬৫ সালে তার বাবা সেনাবাহিনী থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তরুণ যুবকদের প্রশিক্ষিত করে তোলার ভয়ে পাকিস্তানি সেনা সদস্যরা অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্যদের চিহ্নিত করে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। ১৯৭১ সালের ৩ এপ্রিল টঙ্গী অলিম্পিয়া টেক্সটাইল মিলের সামনে ফজরের নামাজ শেষে তার বাবা বাসায় ফিরছিলেন। তখন দেশে কারফিউ চলছিল। ওই অবস্থায় তার বাবা পাক সেনাদের সঙ্গে মানুষ হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। কথোপকথনে অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য হিসেবে তার পরিচয় পাওয়ার পর পাকিস্তানি সেনারা নির্মমভাবে তাকে হত্যা করে। সবশেষে তার মরদেহটিও নিয়ে যায় হানাদাররা। আজও তার কবরের সন্ধান পাইনি আমরা।
জানা গেছে, ১৯৭১ সালের ১৮ এপ্রিল হানাদার বাহিনী শ্রীপুরের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নেয়। শ্রীপুর থানা, গোসিঙ্গা কাচারি বাড়ি, কাওরাইদ রেলস্টেশন, সাতখামাইর রেলওয়ে স্টেশন, গোলাঘাট রেলওয়ে ব্রিজ, ইজ্জতপুর ব্রিজ ও বলদি ঘাট উচ্চ বিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি স্থানে গড়ে তোলে আটটি পাক সেনা ক্যাম্প। রাজেন্দ্রপুর সেনানিবাস থেকে ট্রেনযোগে শ্রীপুর অঞ্চলে পাক হানাদারদের ছিল সহজ যোগাযোগ। শ্রীপুর থানায় ছিল পাক হানাদারদের প্রধান ঘাঁটি। স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় হানাদার বাহিনী নিরীহ নারী-পুরুষ ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের ধরে এনে এসব ক্যাম্পে বর্বর নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করত।
সাধারণ নিরীহ মানুষের ওপর পাকবাহিনীর অত্যাচার, রাজাকারদের মাধ্যমে বাড়ি থেকে ধরে পাকিস্তানি ক্যাম্পে নিয়ে নারী ধর্ষণ, মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার অপরাধে মুক্তিযোদ্ধার বাবা, ভাই, আত্মীয়স্বজনদের হত্যা করে গণকবর দেওয়া ও অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্যদের প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যাসহ নানারকম ধ্বংসযজ্ঞ চালায় পাক সেনারা। তাদের বিতাড়িত করেন মুক্তিযোদ্ধারা। শ্রীপুর থেকে পাকসেনাদের যোগাযোগের জন্য রেলপথ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। চারদিক থেকে আক্রমণের পর ১২ ডিসেম্বর শ্রীপুর ছেড়ে যেতে বাধ্য হয় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এবং আত্মগোপনে চলে যেতে থাকে রাজাকার ও তাদের দোসররা।
মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান বলেন, ৭ ডিসেম্বর ভোর ৪টায় ফায়ারের শব্দ শোনার পর পাকিস্তানি ক্যাম্পে আক্রমণ করা হয়। পরদিন সকাল ৭টা পর্যন্ত গোলাগুলি হয়। মুক্তিযোদ্ধারা দুদিক থেকেই পাক সেনাদের ওপর আক্রমণ করতে থাকে। চলতে থাকে গুলি বিনিময়। শ্রীপুরের গোসিঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র সাহাব উদ্দিন ছিল রেলসেতুর পূর্ব পাশে থাকা দলের সামনের সারিতে। গুলিবিনিময়ের একপর্যায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে সঙ্গে সঙ্গেই শহীদ হন সাহাব উদ্দিন। নিহত হন একজন পাকিস্তানি সেনাসহ ৪ রাজাকার। ১১ ডিসেম্বর রাতের অন্ধকারে পাক হানাদাররা পালিয়ে যায়। ১২ ডিসেম্বর ভোরে শ্রীপুর সম্পূর্ণ রূপে হানাদারমুক্ত হয়।