সংবাদপত্র বার্তা ডেস্ক :: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ , ৩:৩৯:১২ প্রিন্ট সংস্করণ
দীর্ঘ দেড় দশকের বেশি সময় ক্ষমতায় থাকা দল আওয়ামী লীগের শীর্ষ থেকে তৃণমূলের নেতা, মন্ত্রী, উপদেষ্টা ও এমপি এখন গ্রেপ্তার ও মামলা আতঙ্কে ভুগছেন। গ্রেপ্তার এড়াতে কেউ দেশে নিরাপদ আশ্রয়ে, কেউ বা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বিদেশে অবস্থান করছেন। এরই মধ্যে অন্তত দুই ডজন মন্ত্রী-এমপি গ্রেপ্তার হয়েছেন। তারা অনেকে কারাগারে রয়েছেন। যারা দেশত্যাগ করতে পারেননি, তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন দেশের বিভিন্ন স্থানে। এই তালিকায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা যেমন আছেন, তেমনি আছেন সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারাও।
জানা গেছে, অনেকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বসতবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে, ভাঙচুরের শিকার বেশিরভাগই। আত্মগোপনে থাকায় অনেকে চাকরিস্থল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যেতে না পারায় অর্থকষ্টে আছেন পরিবারের সদস্যরা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবির মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দেশত্যাগ করেন। অবসান ঘটে আওয়ামী লীগের টানা চারবারের শাসনামলের। দায়িত্ব নেয় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এর পর থেকে দ্রুত দৃশ্যপট পাল্টে যেতে থাকে। আওয়ামী লীগের নেতা, মন্ত্রী ও এমপিরা গা-ঢাকা দিতে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান, অনেকে দেশত্যাগ করেন। গ্রেপ্তার হতে শুরু করেন আওয়ামী লীগের নেতা, আলোচিত মন্ত্রী ও এমপি। এরই মধ্যে দেশজুড়ে শুরু হয় গণহারে হত্যা মামলা দায়ের, আসামির সংখ্যায় উল্লেখ করা হয় শত শত আওয়ামী লীগের অনুসারীর নাম, অজ্ঞাত রাখা হয় হাজার হাজার। একের পর এক এসব মামলায় আসামির তালিকায় আসতে থাকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা, তার ছোট বোন শেখ রেহানা, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানসহ শীর্ষ প্রায় সব নেতা ও এমপি-মন্ত্রীর নাম।
এদিকে, রোববার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করা হয়েছে। ২০২২ সালে ড. ইউনূসকে পদ্মা নদীতে চুবানি এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে নদীতে ফেলে দেওয়ার হুমকির অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামে এই হত্যাচেষ্টা মামলা হয়।
এদিকে, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা ছাড়াও সারা দেশের এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের নামেও মামলা হয়েছে, এখনো মামলা চলমান রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খুলনা বিভাগে অন্তত ৪৩টি ও বরিশাল বিভাগে কমপক্ষে ১৯টি মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে বরগুনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ফোনালাপের কারণে বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীরসহ ৩১ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। রংপুর বিভাগে অন্তত ২১টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে সাবেক স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর নামও আসামির তালিকায় রয়েছে। সিলেট বিভাগে অন্তত দুই ডজন মামলা হয়েছে আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে। চট্টগ্রাম বিভাগে অন্তত ৫০টি মামলা হয়েছে। রাজশাহী বিভাগে অন্তত ৪৫টি মামলা হয়েছে। ঢাকা বিভাগে এসব মামলার সংখ্যা শতাধিক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হয়রানি করতেই এসব মামলা করা হয়েছে। ঢালাওভাবে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের নামে হত্যা মামলা করা হচ্ছে। বাদ যাচ্ছেন না সহযোগী সংগঠনের নেতারাও। আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মোকাবিলা করা হবে; কিন্তু আইনি লড়াইয়ের মতো মানবাধিকার আওয়ামী লীগের জন্য সংরক্ষিত থাকবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা জানান তিনি।